অলস ৪৫০ কোটি টাকার স্থাপনা

কর্ণফুলী টানেলের মতো টানেল এলাকায় ৪৫০ কোটি টাকায় নির্মিত তারকা মানের রেস্টহাউসসহ সার্ভিস এরিয়া অলস পড়ে আছে। অব্যহৃত থাকায় নষ্ট হচ্ছে জিনিসপত্র। বসিয়ে রেখে বেতন দিতে হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। টানেলের মতোই সাদাহাতিতে পরিনত হয়েছে ওই সার্ভিস এরিয়া। অবশেষে লোকসান কমাতে ওই সার্ভিস এরিয়া বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম এই টানেল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। আনোয়ারা থেকে সংবাদদাতা জানান, টানেল ঘিরে গড়ে উঠা শিল্প কারখানা ও দেশী বিদেশী ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীদের রেস্টের জন্য আবাসন প্রকল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে টানেল সার্ভিস এরিয়া নামে ৪৫০ কোটি টাকার একটি অত্যাধুনিক আবাসন প্রকল্প। এতে রয়েছে ৩০টি বাংলোসহ সাত তারকা মানের রেস্টহাউস। রিসোর্ট বা রেস্ট হাউসের নির্মাণ প্রকল্প শেষ হয়েছে গত বছরের জুনে। গত বছরের ডিসেম্বরে এটি হস্তান্তর করলেও ভবনগুলো অব্যবহৃতই পড়ে রয়েছে। এ কারণে এখন এই রেস্ট হাউসটিকে বেসরকারি খাতে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

জানা যায়, ২০১৩ সালে চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) পরিচালিত সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় কর্ণফুলী টানেল ২০১৭ সালে চালু হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। সেইসঙ্গে প্রাক্কলন করা হয়েছিল, প্রথম বছরে টানেল দিয়ে দৈনিক গড়ে ১৭ হাজার ৩৭৪টি যানবাহন চলাচল করবে। এ সংখ্যা ২০২০ সালে বেড়ে ২০ হাজার ৭১৯ এবং ২০২৫ সালে ২৮ হাজার ৩০৫-এ পৌঁছাবে।

কিন্তু নানা জটিলতা পেরিয়ে এই টানেল উদ্বোধন হয় ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে। উদ্বোধনের সময় টানেলটি দিয়ে যানবাহন চলাচলের যে সম্ভাবনার কথা শোনানো হয়েছিল, তা এখন ‘গালগল্পে’ পরিণত হয়েছে। ফলে টোল আদায়ও অনেক কম। এখন মাসে যা টোল আদায় হচ্ছে তা দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত ঠিকাদারের পেছনে ব্যয়ও মেটানো যাচ্ছে না। এতে প্রতি মাসে গড়ে ঘাটতি প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকা। এছাড়া কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ ব্যয় প্রায় ১০ হাজার ৬৯০ কোটি টাকার মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ৬০.৭৭ মিলিয়ন ডলার।

এদিকে টানেলকে কেন্দ্র করে আনোয়ারা প্রান্তে নেয়া টানেল সার্ভিস এরিয়া নামে একটি প্রকল্পটিও অলস পড়ে আছে। ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সার্ভিস এরিয়াজুড়ে বাংলো ও রেস্টহাউস ছাড়া রয়েছে টানেলের একটি রেপি¬কা, সম্মেলনকেন্দ্র, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হেলিপ্যাড, মসজিদ, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন। আরো রয়েছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্য নিয়ে একটি জাদুঘর। এসব স্থাপনায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ-ব্যবস্থা (এসি) বসানো হয়েছে এক হাজার ১৮২ টন ক্ষমতার। প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে গত বছরের জুনে। এরপর থেকে এটি অব্যবহৃতই পড়ে রয়েছে। এ কারণে এখন এই রেস্ট হাউসটিকে বেসরকারি খাতে ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে টানেল সার্ভিস এরিয়ার এক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, প্রতিটি বাংলাতে অত্যাধুনিক আসবাবপত্র ও সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। কিন্তু এখানে কেউ আসেন না। মাঝে মধ্যে সেতু কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কিছু রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা, অতিথি এলেও প্রায় সময় ফাঁকাই থাকে পুরো রেস্ট হাউস এলাকা।
এ বিষয়ে জানতে চ্ইালে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, কর্ণফুলী টানেল সার্ভিস এরিয়া রিসোর্টটি আমরা বেসরকারি খাতে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দ্রুত দরপত্র আহ্বান করা হবে। এসব বাংলো পর্যটন ব্যবসায় যুক্ত এমন কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হলে সরকারের লোকসান কমে আসবে।

Source link

Exit mobile version