অভাব থেকে উদ্যোক্তা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির দৃষ্টান্ত মহসিন

বাগেরহাটের মোল্লাহাট এলাকার মো. মহসিন শিকদার, একজন হাফেজ মাওলানা এবং সফল উদ্যোক্তা, তার জীবন সংগ্রামের এক অনন্য উদাহরণ। মাত্র ছয় বছর বয়সে বাবা হারানোর পর, অভাব-অনটনের মধ্যেই মহসিন শুরু করেন নিজের পথচলা। শৈশবেই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, জীবন সংগ্রামে শক্ত থাকার জন্য আত্মবিশ্বাস এবং অধ্যবসায় অপরিহার্য।
বাবার মৃত্যুর পর, তার জীবন সংগ্রাম শুরু হয় মহসিনের। হেফজ পড়ার জন্য গ্রামের বাড়ী থেকে পাঠায় খুলনার রূপসা এলাকায়। সেখানে হেফজ পড়ার সময়ে ওই ৪ বছরে তার মাত্র একটি জামা ছিলো তার। করোনাকালে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছিল। তবে সে সময়ের অভাব-অনটন তার মনোবল ভেঙে দিতে পারেনি। একদিন মোবাইলের মাধ্যমে পরিচয় হয় এক বীজ ব্যবসায়ীর সাথে এবং সেখান থেকেই তার উদ্যোক্তা জীবনের শুরু। প্রথমে টিউশনের ১৫০০টাকা দিয়ে একটি অ্যাড্রয়েড মোবাইল কেনেন। সেই মোবাইলের মাধ্যমে বীজ বিক্রি শুরু করেন। প্রথম সপ্তাহে ২০ টাকা কমিশন পেলেও তিনি হতাশ হননি বরং আরও উদ্যোগী হয়ে কাজ করতে থাকেন।
তার পরিশ্রমের ফল মিলতে সময় নেয়নি। ধীরে ধীরে মহসিন খুলনার রূপসা এলাকার তাঁর ‘শিকদার সীডস’ নামের প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বীজ সরবরাহ করা হয়। তার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ১৫ জন ফুলটাইম কর্মী কাজ করছেন এবং আরও ১৪ জন পার্টটাইম কর্মী নিয়োজিত আছেন। প্রত্যেকের বেতন ৮-১০ হাজার টাকা। দিনে ৫০০টিরও বেশি অর্ডার আসে এবং কর্মীরা দিন-রাত পরিশ্রম করে তা পূর্ণ করেন।
মহসিনের গল্প শুধু তার ব্যক্তিগত সাফল্যের নয়। এটি তার এলাকার জন্যও একটি বড় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময় তিনি চাকরির জন্য ঘুরেছেন, কিন্তু এখন তিনি এলাকার অনেক বেকার ও অসহায় ব্যক্তিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, মহসিনের প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি পাওয়ার মাধ্যমে তারা এখন একটি সচ্ছল জীবন পেতে শুরু করেছে। এর মাধ্যমে তারা অনুভব করতে পেরেছে যে, উদ্যোক্তা হওয়া শুধু নিজের জীবনই বদলাতে সাহায্য করে না বরং অন্যদের জীবনও পরিবর্তন করতে পারে।
মহসিন তার জীবনে শুরুর দিকে যে ব্যবসায়ী ভাইয়ের কাছ থেকে বীজ নিয়েছিলেন তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। সেই ব্যক্তি তাকে প্রথম বীজ বিক্রি করতে বলেছেন, আর তখন থেকেই ব্যবসার প্রতি তার আগ্রহ জন্ম নেয়।
মহসিন জানান, আমি শুরুতে সেই ভাইয়ের ৬০০ টাকা পরিশোধ করতে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম। সেই টাকা পরিশোধ করেছি। তারপর, নিজেই ব্যবসা শুরু করি এবং আজ আমি আমার দলের সাথে ১৫ জনের একটি টিম গড়ে তুলেছি।
এখন মহসিন আগামী কিছুদিনের মধ্যে উমরাহ করতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। তার প্রতিষ্ঠানের বিস্তৃত কর্মসংস্থান এবং সাফল্য তার জীবনকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তার প্রতিটি পদক্ষেপ তার আত্মবিশ্বাস, সংকল্প এবং কঠোর পরিশ্রমেরই ফলস্বরূপ।
মহসিনের উদ্যোগের জন্য তার কাছ থেকে বীজ নিয়ে উপকৃত হওয়া অনেক ব্যক্তি তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তার এই সাফল্য শুধু তার নিজের নয় বরং পুরো অঞ্চলের জন্য একটি প্রেরণা হয়ে থাকবে।