
‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর একমাসে বরিশাল মহানগর ও জেলায় প্রায় সাড়ে ৩শ’ অপরাধীকে গ্রেফতার করা হলেও এখনো বড় ধরনের অপরাধী ও সমাজ বিরোধীরা ধরাছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে। গত একমাসে বরিশাল মহানগর পুলিশের ৪টি থানায় গ্রেফতার করা হয়েছে ২৮ জনকে। এর বাইরে জেলার ১০টি থানায় আরো ৩ শতাধিক বিভিন্ন ধরনের অপরাধিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
তবে গত একমাসে গ্রেফতারের এ সংখ্যাটা জনমনে যেমনি স্বস্তি দিতে পারছে না, তেমনি বেশ কিছু ঘটনা অস্তস্তিও বৃদ্ধি করছে। গত সপ্তাহেই বরিশাল মহানগরীতে যুব দলের এক নেতার হাতে আরেক নেতা নিহত হয়েছেন। মাদক ব্যবসার দখলদারিত্ব নিয়ে এ ঘটনা ঘটে বলে মনে করা হচ্ছে। নিহতের পরিবারে কান্না এখনো থামেনি। এর বাইরে বরিশালের হিজলা, মেহেদিগঞ্জসহ আরো কয়েকটি এলাকায় বেশকিছু ঘটনা জনমনে অস্বস্তি বৃদ্ধি করছে। নগরীর একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির পদ প্রদানের অনৈতিক দাবিতে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে চেয়ারম্যানের ওপর চড়াও হবার ঘটনাটি যথেষ্ঠ সমালোচিত হলেও কোনো প্রতিকার নেই। নগরীর সবগুলো বাস টার্মিনাল দখলসহ নির্বিচারে চাঁদাবাজির ঘটনায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের তেমন কোনো মাথাব্যাথা নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এমনকি বরিশাল মহানগরীসহ প্রতিটি উপজেলাতেও রাজনৈতিক আশ্রয়পুষ্ট এক শ্রেণীর দীর্ঘ দিনের অভুক্ত সমাজবিরোধী সাম্প্রতিক পট পরিবর্তনের পরে ফুটপাতের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বাসাবাড়িতেও চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছে। সাম্প্রতিককালে বরিশাল মহানগরীসহ সর্বত্রই রাজনৈতিক পরিচয়ে যে চাঁদাবাজি ও দখলবাজি শুরু হয়েছে, তা থেকে পরিত্রাণ সহ নির্মূল জরুরি বলে দাবি সবার। কিন্তু সে লক্ষে কোনো রাজনৈতিক দলের মাথাব্যাথা নেই বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল। অথচ এর দায় পড়ছে আগামীল সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক দলেও ওপরেই। অভিযোগ রয়েছে, বরিশাল মহানগরীর বেলপার্ক, নবগাম রোড-চৌমহনী লেকের পাড়, বিবি’র পুকর পাড়, স্বাধীনতা পার্ক, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক এবং ত্রিশ গোডাউন সংলগ্ন শতায়ু অঙ্গনজুড়ে পথ খাবারের দোকান বসিয়ে ঐসব এলাকার পরিবেশ বিনষ্টের পাশাপাশি প্রতি মাসে ২০-৩০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে রাজনৈতিক পরিচয় বহনকারী একাধিক ক্ষুধার্ত ছাড়পোকা।
এসব বিষয়ে বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনারের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, ‘আমরা যেকোন অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছি। চাঁদাবাজির অভিযোগ না পেলে তো আমরা কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি না’ বলেও জানান তিনি।
বরিশালের পুলিশ সুপারও প্রায় একই কথা বলেন। তবে জেলার ১০টি থানায় গত একমাসে প্রায় সোয়া ৩শ’ অপরাধীকে গ্রেফতারসহ আইনের হাতে সোপার্দের কথা জানিয়ে তিন সবার সহযোগিতা কামনা করে জনগণকে নিয়েই পুলিশ কাজ করছে বলে জানান। বরিশালের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেশের অনেক এলাকার তুলনায় ভাল। পাশাপাশি পুলিশ সুপার যেকোনো অন্যায় ও বেআইনি কর্মকান্ড পুলিশকে অবহিত করারও অনুরোধ জানান।